23rd April, 2025

পহেলগাঁও রক্তাক্ত! কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে দু-চার কথা

images/bnd-2250515151102.jpg

পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার ঘটনায় শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব। পাকিস্তানি সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলায় গত মঙ্গলবার রক্তাক্ত হয়ে ওঠে ভূস্বর্গের মাটি। বেছে বেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করে চলে হত্যাযজ্ঞ। গত মঙ্গলবারের এই সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন নিরীহ পর্যটক। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন অনেকেই।

সবমিলিয়ে পহেলগাঁও জঙ্গি হামলায় ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকান, সর্বত্রই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে 'মিনি সুইজারল্যান্ড' বলে খ্যাত পহেলগাঁও। আম জনতা থেকে বলিউড সেলিব্রিটি, পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা নিয়ে মুখ খুলেছেন সকলেই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একযোগে সকলের একটাই দাবি, "যোগ্য জবাব দিতে হবে পাকিস্তানকে।"

ঘটনার ভয়াবহতা দেখে আর বসে থাকতে পারলাম না। বাধ্য হলাম কিছু কথা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে।

পহেলগাঁও হামলা নাড়িয়ে দেয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এই ঘটনার পর থেকেই আমূল পরিবর্তন এসেছে আমাদের চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতিতে। ১৯৪৭ সালের  পর থেকে আমরা সকলেই জানতাম ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলেও, দুই প্রতিবেশী নিজেদের মধ্যে সম্মানজনক সৌহার্দ্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলবে ভবিষ্যতের দিকে। তবে কঠোর বাস্তবতায় সেই ভাবনা ভাবনাই থেকে গিয়েছে।

আমার মতে, পহেলগাঁও হামলা নিয়ে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ইসলামিক ফান্ডামেন্টালিজমের নামে যে ঘটনা ঘটল তার বলি হলেন নিরীহ ২৬ জন সাধারণ নাগরিক। ইজরায়েল আজ যে ঘটনা হামাসে ঘটাচ্ছে বা হিটলার জিউসদের সাথে যে ঘটনা ঘটিয়েছিলেন, পহেলগাঁও অ্যাটাকের কাছে সেসবও যেন অনেকটাই মসৃণ বা লঘু।

এই ঘটনার পর গোটা ভারত আঙুল তুলেছে পাকিস্তানের দিকে। পাকিস্তানের উপর দোষারোপ করাটা খানিকটা হয়ত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমাদের, আবার খানিকটা হয়ত বাস্তব সত্য।

কিছুদিন আগেই পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের 'টু নেশন থিওরি' বক্তব্যের দিকটা যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে বিষয়টা বুঝতে আমাদের কিঞ্চিত সুবিধা হবে।

সরকারের ব্যাখ্যা, অনাবাসী পাকিস্তানীদের একটি সভায় পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির 'টু নেশন থিওরি' নিয়ে অর্বাচীন বক্তব্য রাখেন পহেলগাঁও অ্যাটাকের কিছুদিন আগেই। বালুচ বিদ্রোহীদের জাফর এক্সপ্রেস হাইজ্যাকের ঘটনার পর থেকে তুমুল হতাশায় ভুগছে পাক সরকার। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে আসিম মুনিরের বক্তব্যে।

পহেলগাঁও হামলায় ৪ অভিযুক্তের মধ্যে ৩ জনই পাক নাগরিক। এই ঘটনায় আদতে বিচলিত পাকিস্তানই। মার্কিন রাষ্ট্রপতির চেয়ারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের পর পাকিস্তানের উপর থেকে সাহায্যের হাত তুলে নিয়েছে আমেরিকা। পাকিস্তানের অপর বন্ধু চিনের অর্থনৈতিক অবস্থাও টালমাটাল। এই পরিস্থিতিতে চিনকে আদৌ পাকিস্তান পাশে পাবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে পাক প্রশাসন। চিনা অর্থনীতি মূলত রপ্তানি নির্ভর। সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাশাপাশি রপ্তানির জন্য ভারতের উপর বহুমাত্রা নির্ভরশীল চিন। এই অবস্থায় যদি ভারতের বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তানের পাশে চিন দাঁড়ায়, তাহলে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের সম্মুখীন হতে পারে শি জিনপিংয়ের দেশ।

সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি স্থগিত রেখে আদৌ কি শায়েস্তা করা হবে পাকিস্তানকে? এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, পহেলগাঁও হামলার পর ভারতের তরফে যে যে কূটনৈতিক স্ট্রাইক করা হয়েছে তার মধ্যে সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি স্থগিত রাখার বিষয়টিই একমাত্র চিন্তায় ফেলতে পারে পাকিস্তানকে। তবে সিন্ধু জল বণ্টন চুক্তি শুধুমাত্র ভারত বা পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নয়। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও দেশ যুক্ত এই চুক্তিতে। সেক্ষেত্রে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক সহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হতে পারে শেহবাজ সরকার।

পরিশেষে একটাই কথা বলার, ভারতের সুরক্ষার দায়িত্বটা কেবল নরেন্দ্র মোদি কিংবা সরকারের হাতে ছেড়ে দিলেই হবে না, পাশাপাশি কাশ্মীরের শান্তি যাতে ফিরে আসে তার দিকে নজর দিতে হবে। পাশাপাশি কাশ্মীর যাতে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর মত আত্মপ্রকাশ করতে পারে সেই দায়িত্বও ভারতের পলিসি মেকারদের নিতে হবে।

Share this:

Comments

Leave a Reply

Featured Video

Weather Forecast

Calendar